খুলনার পাইকগাছায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক পাইকগাছা-কয়রার কৃতি সন্তান সাবেক এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী যথা যোগ্য মর্যাদায় পালন।
পৌরসভার সরল শহীদ গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি,আলোচনা সভা,যোহরবাদ লোনাপানি কেন্দ্র মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং রাড়ুলী
আল-হিরা এতিমখানায় খাবার বিতরণ।সকল অনুষ্ঠান এমএ গফুরের জ্যৈষ্ঠ পুত্র পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টুর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা,ইন্সট্রাক্টর রিসোসসেন্টার মোঃ ঈমান উদ্দিন,সহকারী শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান,
ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ,প্যানেল মেয়র এসএম তৈয়বুর রহমান ও কবিতা রানী দাশ, সহকারী অধ্যাপক ময়নুল ইসলাম,প্রধান শিক্ষক সেলিনা পারভিন,জগদীশ রায়,
আরশাদ আলী বিশ্বাস প্রমূখ।স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশত বছর আর মহান ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর অতিবাহিত হলেও মেলেনি ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ভাষা সৈনিক শহীদ এমএ গফুরের। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার পরও মেলেনি স্বাধীনতা পদক। হত্যার বিচার হয়নি আজও।তবে দেরিতে হলেও বর্তমান সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন শহীদ এম,
এ গফুরের হত্যার বিচার,ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি ও স্বাধীনতা পদক পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন শহীদ এমএ গফুরের পরিবার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট এ মহান নেতার হত্যার বিচারের দাবিতে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য,খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার হরিনগর গ্রামে আলী সানার ঘরে বাংলা ১৩৩২ সালের ২৬শে বৈশাখ জন্ম নেন এমএ গফুর। মৌখালী খাসমহল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও ১৯৪৪ সালে আশাশুনির বুধহাটা স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিএল কলেজে।
যোগ দেন নয়া-সাংস্কৃতিক সংসদে।ভারত বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে ভাষা সংগ্রাম কমিটির খুলনা জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান তিনি।ছাত্র-যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ ও করেন। আসেন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বে।
১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)গঠিত হলে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।এগিয়ে যান রাজনৈতিক অঙ্গণে শীর্ষ পদে।নজরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের।১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর মনোনীত হয়ে পাইকগাছা আশাশুনি (বর্তমান কয়রা পাইকগাছা) হতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন এবং মুসলিমলীগের প্রভাবশালী নেতা পাকিস্তান সরকারের যোগাযোগামন্ত্রী খান এ সবুরের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
উক্ত সংসদীয় আসনটি পাঁচটি মুসলিমলীগের বিজয়ী আসনের মধ্যে থাকলেও অকল্পনীয়ভাবে এম এ গফুরকে জয়ী করে মেম্বর অফ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি (এমএনএ) পদে বসান।এরই মধ্যে আসে স্বাধীনতার ডাক।ছাত্র-যুব সমাজকে নিয়ে গেরিলাযুদ্ধ শুরু করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আগ্রাসনকে প্রতিহত করে এলাকা করেন হানাদারমুক্ত।
এম এন এ (এমপি)পদে থাকা কালীন সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাইকগাছার আলমতলা নামক স্থানে বেড়িবাঁধ উদ্বোধনে এসে তাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি মন্ত্রীত্ত্ব না নিয়ে এলাকার উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখেন।
১৯৭২ সালের ৫ জুন স্বাধীনতার মাত্র ছয় মাসের মাথায় পরাজিত ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।তার সফর সঙ্গী চাঁদখালীর রিয়াজউদ্দিন ও হড্ডার কামাল হোসেনও শহীদ হন। এ ঘটনায় ওই সময় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এই হত্যাকান্ডের আর বিচার হয়নি।সাবেক এমএনএ শহীদ এম এ গফুরের ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমরা অবিলম্বে এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবী করি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।